বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাণী সমূহ (৭১-১০০)

বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাণী সমূহ (১-৫০)


বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাণী সমূহ (৫১-৭০)


৭১। “আমি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনায় যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা বাংলাদেশ ও এ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বার্থেই নিয়েছিলাম। বাঙালির আশা-আকাক্ষা আর বাঁচা-মরার প্রশ্নকে সেদিন সবচেয়ে উচুতে স্থান দিয়েই আমি কাজ করে গিয়েছি। আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এবং একজন খাটি বাঙালি হিসেবে আমার দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করতে পারায় আমি খুশি।”।

৭২। “বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও উপকরণ সংগ্রহ করে এর ইতিহাস রচনা করতে হবে। মিথ্যা ও কল্পনার রঙে রঞ্জিত কোনো ইতিহাস যদি রচনা করা হয় তবে তা নিশ্চিতভাবে আগামীতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।”

৭৩। “বল প্রয়োগে কোনো সমস্যারই সমাধান করা যায় না। রাজনৈতিক সমস্যাদি রাজনৈতিকভাবে এবং সামাজিক সমস্যাদি সামাজিকভাবে সহজেই সমাধান করা যায়।”

৭৪। “প্রতিটি নাগরিক তথা বিরোধী দলগুলোর বোঝা উচিত যে, দায়িত্বহীন সমালোচনা দেশের ক্ষতি সাধন করে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরই ভালো কাজের জন্য সুফল ভোগ অথবা খারাপ কাজের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হবে।”

৭৫। “দুই যুগেরও বেশি সময় আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে এবং এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হয়ে সে সংগ্রামে শরিক হয়েছে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে সফল করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই বাংলার মানুষ ভালোবেসে তাকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু খেতাব দিয়েছে। কাজেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কটুক্তি করার এখতিয়ার কারোরই নেই।"

৭৬। “শিক্ষায়তনের বাইরে খেলাধূলা ও পড়াশোনার সুযোগ নেই বলে তরুণ সমাজ বিপথে যাচ্ছে। জাতি ও সমাজ গঠনে তরুণ সমাজকে নিয়োজিত করতে হলে তাদের অভাব অভিযোগ দূর করে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।”

৭৭। “প্রাচীন ঐতিহ্যকে ভর করে বর্তমান পৃথিবীর প্রবাহের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে গড়ে তোলার ব্রত গ্রহণ করতে হবে।”

৭৮। “সমাজকে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব বহনের জন্য আদর্শবাদের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হবে।”

৭৯। “প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে। দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগানো হবে। বিচারক, অধ্যাপক, শিক্ষক, ডাক্তার, কারিগর, প্রকৌশলী প্রভৃতি গড়ে তোলার দিকে নজর দেওয়া হবে। ছাত্রদের মধ্যে কার কোন বিষয়ে ঝোক রয়েছে তা যাচাই করার চেষ্টা করা”

৮০। “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণকে সৎ, বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী ব্যক্তিদের ভোট দিতে হবে। কেননা এদেরকেই জাতীয় পুনর্গঠন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, তা না হলে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যাবে না এবং দেশের উন্নতি হবে না। দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন নির্ভুল অর্থনৈতিক পরিকল্পনার।”

৮১। “নতুন মানসিকতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। নিজেদের কর্তব্য নিজেরা পালন করলেই জাতীয় কর্তব্য করা হবে।

৮২। “অতীতে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আমাদের দেশ স্বাধীন। এখন আমাদেরকে নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতার এমন একটি উন্নত ঐতিহ্য উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যেতে হবে যা ভবিষ্যত বংশধরদেরকে প্রেরণা যোগাবে এবং যার ফলে ভবিষ্যৎ বংশধর গর্ব অনুভব করতে পারেন।”

৮৩। “উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে নববর্ষকে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি পুরাতন বছরের ভুল-ভ্রান্তি বা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করে নববর্ষে নির্ভুল এবং সঠিক পথে যাত্রার শপথ গ্রহণ করতে পারি, তবেই নববর্যের এই সব আচার-অনুষ্ঠান আমাদের জন্য তাৎপর্যময় হতে পারে।”

৮৪। “অপরের মঙ্গলের জন্য একমাত্র আত্মত্যাগী চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই জাতি গঠনে অবদান সৃষ্টি করতে পারেন। স্লোগান নয় বরং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয়।"

৮৫। “যে কোনো দেশ অথবা জাতির ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের বিশ্বব্যাপী প্রচারের মাধ্যম হিসাবে বিজ্ঞাপন শিল্প একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন শিল্পও তার থেকে ভিন্ন নয়।"

৮৬। “সংস্কৃতি ও সভ্যতা ফরমায়েশ দিয়ে তৈরি করা যায় না। দেশ ও জনতার মধ্যে থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এটা গড়ে উঠে। তবে সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য পথ নির্দেশের প্রয়োজন রয়েছে।"

৮৭। “ঘুম পাড়ানিয়া গান আমাদের গাইলে চলবে না, যে গান আমাদের কঠোর পরিশ্রম করার জন্য জাগিয়ে রাখবে, সে গান আমাদের গাইতে হবে।”

৮৮। “ইতিহাসে এই প্রথম বাঙালিদের আবাসভূমি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধনে আমাদের চেষ্টা করা উচিত। আমাদের সাহিত্য, চিত্রকলা ও লোক কাহিনীর যে সব উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; সেগুলো একত্রিত করে সংস্কৃতির ইতিহাস আবার নতুন করে সৃষ্টি করা যায়। সে জন্য এ কাজে বিভিন্ন স্তরের চিন্তাধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।"

৮৯। “জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃত্বের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।”

৯০। “সমন্বিত ও সুশংখল অর্থনৈতিক তৎপরতা উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। উৎপাদন ও বন্টনের সমস্ত খাতকে অবশ্যই একযোগে এবং সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ফ্যাক্টরিগুলোতে যদি ধর্মঘট ও লকআউট চলতে থাকে তাহলে রফতানি তৎপরতা কোনোক্রমেই উন্নত করা যাবে না। যেমন—অনেকগুলো জাহাজ আমাদের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিল, কিন্তু ফিরে যাবার সময় তারা পাট নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ জুট বেলিং কেন্দ্রগুলোতে ধর্মঘট চলছিল। এর চাইতে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। বারংবার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকার ফলে সময়মত নিশ্চিতভাবে আমাদের সরবরাহের ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের বিদেশী ক্রেতাদের মনে আস্থার অভাব ঘটছে।”

৯১। “সরকারী কর্মচারিদের নিয়ে এবং আন্তরিকতা ও সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারি কর্মচারিরা যেন বাইরের কোনাে চাপের কাছে নতি স্বীকার না করেন।”

৯২। “আমাদের সমস্যাবলী সমাধানের পন্থা বের করার আগে এগুলোর মূল কারণগুলো ঠিকভাবে খুঁজে বের করতে হবে। এগুলো লুকিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।”

৯৩। “দেশে আজ সাধারণ শিক্ষার সাথে সাথে আরো বেশি করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা আবশ্যক। কেবলমাত্র সাধারণ শিক্ষার ফলে সমাজে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।"

৯৪। “দেশের আপামর জনসাধারণ তিনি যেই হোন না কেন—রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, ডাক্তার, ঠিকাদার, কারখানার শ্রমিক, ছাত্র, কৃষককে তার নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।"

৯৫। “বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে একমাত্র কৃষক ছাড়া আর কেউ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। কৃষক সমাজ বহু অসুবিধার মধ্যে দিয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

৯৬। “বাংলাদেশের জন্য পাট হলো স্বর্ণের খনি। যতদিন প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি মোতাবেক রফতানি পণ্য সরবরাহ করা যাবে, ততদিন বাংলাদেশ বিশ্বে পাটের বাজার হারাবে না।"

৯৭। “সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলই বিকল্প সরকার। বিরোধী দলগুলোকে এমন হতে হবে যেন তারা জনগণের পূর্ণ আস্থা লাভ করতে পারে। তা না হলে দেশের জনগণ হতাশার শিকার হবে। বাংলাদেশের জনগণকে নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত করার অধিকার কোন বিরোধী দলেরই নেই।”

৯৮। “নতুন সমাজ গড়ার জন্য শিক্ষা বৃত্তিমূলক হওয়া প্রইয়োজন এবং কতজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার দরকার তা জরিপ কর শিক্ষা দিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থার শিক্ষা পদ্ধতির বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা নিতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।"

৯৯। “প্রতিরক্ষার সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি হল সন্তুষ্টিচিত্ত জনগণ। কাজেই জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে হবে।”
১০০। “সমাজের ভিত্তি গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকাই।”

Post a Comment

0 Comments