বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাণী সমূহ (৫১-৭০)

বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাণী সমূহ (১-৫০)


৫১। “বিশ্বব্যাপী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নিয়ম হচ্ছে শ্রমিকরা দাবি উত্থাপন করবে আর সাথে সাথে উৎপাদনে বাড়িয়ে যাবে এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করবে। প্রতিদিন ঘেরাও করে, প্রতিদিন দাবি উত্থাপন করে, আর জোর জবরদস্তি করে, স্বাক্ষর করিয়ে দাবি আদায় করাকে স্বাধীনতা বলে না।”

৫২। “ছাত্র সমাজকে পরস্পরের মতের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ছাত্রদের রাজনীতির পাশাপাশি লেখাপড়াও ঠিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। ছাত্রদের মনে রাখতে হবে তাদের প্রাথমিক এবং প্রধান কর্তব্য হল লেখাপড়া করা।”

৫৩। “যত সুন্দর ভাষা ও শব্দ দিয়ে সংবিধান লেখা হোক না কেন, জাতির জীবনে তা প্রয়োগ না হলে সেটা অর্থহীন হয়ে পড়বে।”

৫৪। “আধুনিককালে বাণিজ্য ও শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন এক অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের বাণিজ্য ও শিল্পকে উন্নত দেশের সমপর্যায়ে আনতে গেলে আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন শিল্পের উন্নয়নের আবশ্যকতা অপরিহার্য। আমাদের বিজ্ঞাপন শিল্পকে বিশেষভাবে দেশীয় দ্রব্যের ব্যাপারে বিপুল চাহিদার উন্মেষ ঘটানোর জন্য আত্ম-নিয়োগ করা উচিত, যার ফলে দেশের রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বিদেশী ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব হয়।

৫৫। “সংবিধানে মৌলিক অধিকার সংযোজন করলেই কেবল চলবে না, জনগণ যাতে এসব অধিকার ভোগ করা থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকবে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেনতা একান্ত প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণকে অধিকার সচেতন করে তোলার ব্যাপারে অগ্রবর্তী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। জনগণ সচেতন না হলে আদালত তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।"

৫৬। “বর্তমানে এ দেশের শিক্ষাঙ্গনে যা শেখান হচ্ছে, তা একটি নতুন দেশের মূল সমস্যার বহির্ভূত । শিক্ষাবিদদের দেশের সত্যিকারের সমস্যা ও শিক্ষার কথা ভেবে সমস্যার সমাধানকল্পে এগিয়ে আসতে হবে।”

৫৭। “দেশের শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত যাতে তারা শিশুদের মানসিক গঠন বুঝে শিক্ষা দানে সক্ষম হন।
৫৮। “১০ এপ্রিল আমি স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠন করি এবং ওইদিনই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়।”

৫৯। “আমরা সামন্তবাদী অবস্থা ও পরিবেশ থেকে এখনও পূর্ণ গণতান্ত্রিক অবস্থায় পৌঁছতে পারিনি। সামন্ত প্রভু আজ নেই সত্য-কিন্তু সামন্ত মনোবৃত্তি এখনও রয়েছে। আগে এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।”

৬০। “গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের অসাবধানতা-বশত দোষত্রুটি তুলে ধরতে হবে। শুধু বিরোধিতার খাতিরে কোনো দল অথবা ব্যক্তি বিশেষের সরকারকে সমালোচনা অথবা দোষারোপ করা উচিত নয়। জাতীয় স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে দল অথবা ব্যক্তি বিশেষের সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া উচিত।”

৬১। “ভিতরে ইঁদুর রেখে বাইরে মাটি দিলে সমস্যার সমাধান হবে না।”

৬২। “বক্তৃতা কমাতে হবে। এখন ভেবে দেখতে হবে বক্তৃতায় যা বলা হয়েছে তা করা হয়েছে কিনা!”

৬৩। “মােকাবিলা করার মতাে সংকল্প থাকলে কোনাে সমস্যাই তেমন বড় নয়, যা সমাধান করা যায় না।”

৬৪। “শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য আমরা মুক্তি সংগ্রাম করিনি, আদর্শের বাস্তবায়নের জন্যই আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম। করেছিলাম।”

৬৫। “সমকালীন ইতিহাস রচনা ও তা প্রকাশ করা খুবই কঠিন। কারণ তাতে জীবিত ব্যক্তিদের সংঘর্ষ হতে পারে। এতে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে মিথ্যা কথা বলব না, সত্য গোপন করতে পারি।”

৬৬। “আগে কখনো ভাবিনি যে, আমার মতো সাধারণ কর্মীর ওপর জাতির ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের দায়িত্ব পড়বে। দেশবাসীও সম্ভবত তা পূর্বে কখনো ভাবেনি। আসলে নেতৃত্ব হচ্ছে জনগণের মনের আশা-আকাক্ষার প্রতিফলন। ধনতন্ত্রের পথে কিংবা কোনো যুদ্ধ জোটে যাব না—এই মনোভাব নিয়েই ১৯৭১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করি। স্বাধীনতা সংগ্রামে কুটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি বিরাট পদক্ষেপ।”

৬৭। “পাকিস্তান তার বন্ধুদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির বহু চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারও আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য বহুভাবে চেষ্টা করে। সংগ্রামের এক পর্যায়ে আমেরিকা প্রশ্ন তোলে—“স্বাধীনতা চাও না, মুজিবকে চাও”। এর উত্তরে আমি বলেছিলাম, স্বাধীনতাও চাই, মুজিবকেও চাই। স্বাধীনতা এলেই মুজিবকে পেতে পারি'। কারণ, আমি জানতাম, আদর্শের মধ্যে শেখ মুজিবকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই স্বাধীনতা সংগ্রাম জোরদার হবে। আর এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর সাথে ২৭ বছর রাজনীতি করেছি, তাকে আমি গভীরভাবে জানি।”

৬৮। “গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে সহনশীলতা। এর অভাবে শুধু রাজনৈতিক দলগুলােরই ক্ষতি হবে না, খোদ রাষ্ট্রের স্বার্থও বিঘ্নিত হয়। রাজনৈতিক কাদা ছােড়াছুড়ির পথ পরিহার করে ক্ষমতাসীন ও বিরােধী এই উভয়পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলাের সহনশীলতার অনুশীলন শিক্ষার প্রয়ােজন। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থকে উর্ধে রেখে পারস্পরিক মতামতের প্রতি প্রদ্ধাশীল হতে হবে।”

৬৯। “বাংলাদেশের এই বিপ্লব কোনো একদিনের ঘটনা নয়। এর জন্য আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বাঙলি জাতিকে ধীরে ধীরে বিপ্লবের দিকে এগিয়ে নিয়েছে এবং এ ভাবেই তাদের মানসিক প্রস্তুতি ঘটিয়েছে। এরপর ২৫ মার্চ রাতে জেনারেল ইয়াহিয়ার বর্বর বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সমগ্র বাঙালি জাতি তার প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ শপথ নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হামলা শুরু হওয়ার পর ঢাকা থেকে পালিয়ে আমি জীবননগরে পৌছাই। সঙ্গে ছিল ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। পালিয়ে যাবার পথে এ দেশের মানুষের স্বাধীনতা লাভের চেতনার যে উন্মেষ দেখে গিয়েছিলাম সেটাই আমাকে আমার ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে অনিবার্য সুযোগ দিয়েছিল। জীবননগরের কাছে সীমান্তবর্তী টঙ্গি নামক স্থানে একটি সেতুর নিচে ক্লান্ত দেহ এলিয়ে আমি সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা হল : একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য কাজ শুরু করা।”

৭০। “বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলি সরকারের ভুলত্রুটিকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জনের মধ্যেই তাদের রাজনীতিকে সীমিত রেখেছেন। অথচ আমরা দীর্ঘ ২৩ বছর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছিলাম এর আগে। কিন্তু কখনোই কারো বিরুদ্ধে অশালীন কথাবার্তা কিম্বা কাল্পনিক অভিযোগ আনিনি। লোককে উস্কানি দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু তাদের সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া খুবই কঠিন কাজ।”

বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাণী সমূহ (১-৫০)

Post a Comment

1 Comments